চীনের বেশির ভাগ মানুষ উইচ্যাটের মতো বিভিন্ন সুপার অ্যাপের ওপর নির্ভর করছে। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে ট্যাক্সি ভাড়া নেয়া, ঋণ গ্রহণ ও অর্থ লেনদেনের মতো বিভিন্ন কাজ সারছে একই প্লাটফর্মে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এমন ওয়ান-স্টপ সেবা দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সময় যুক্তরাষ্ট্রে সুপার অ্যাপ চালুর এবং এ সুপার অ্যাপ চালু ও ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের দাবিদার ফিনটেক বিশ্ব, বিশেষত যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। আকাশচুম্বী ইকুইটি মূল্য, রেকর্ড সর্বনিম্ন সুদহার ও মূল্যস্ফীতির শঙ্কার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদি তা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে তা আরো গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব কংগ্রেসে আলোচনা শুরু হতে দেখা যাচ্ছে। কয়েনবেজ, পেপাল, ভেনমো ও স্ট্রাইপ ইত্যাদি প্লাটফর্মের মাধ্যমে ক্রিপ্টো লেনদেনসহ বিভিন্ন পেমেন্ট করা যাচ্ছে। সরকার অনুমোদন করলে এ প্লাটফর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সুপার অ্যাপে পরিণত হবে। মোদ্দাকথা হলো, মানুষের আর্থিক চিন্তা কেবল ব্যাংকেই সীমাবদ্ধ নয়। কোথাও কেনাকাটা, অবকাশ কিংবা চিকিৎসা বিল প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক সেবা নেয়ার ভাবনা কাজ করে। ক্রিপ্টো ও পেমেন্ট অ্যাপগুলোকে অন্য অ্যাপ ও সেবার সঙ্গে সংযুক্ত করে বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা সহজসাধ্য করা যায়। এক্ষেত্রে সুপার অ্যাপই হতে পারে এ সময়ের সমাধান, যা গ্রাহকের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে পারে। ক্রিপ্টো লেনদেন ও অন্যান্য কাজকে একীভূত করলে অর্থ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতগুলো আরো গণতন্ত্রায়ণের আওতায় আসবে। যারা ক্রেডিট কার্ড পেতে হিমশিম খান কিংবা যাদের ব্যাংকঋণ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়, তারা বিস্তৃত আর্থিক পরিষেবার আওতায় আসবে। এক অ্যাপে অনেক কাজ সারার এ সুপার অ্যাপের আইডিয়া চীনে সাড়া জাগায়। ২০১১ সালে চীনে যাত্রা করে মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট। ২০১৩ সালের মধ্যেই এটা একটি পেমেন্ট প্লাটফর্ম হিসেবে সেবা দেয়া শুরু করে। এতে শপিং, ফুড ডেলিভারি ও রাইড শেয়ারিং খাতে বিল দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে চীনের লাখো প্রতিষ্ঠান উইচ্যাটের সেবা গ্রহণ করছে। আলিবাবা মালিকানাধীন আলিপের গ্রাহক সংখ্যাও শতকোটি ছাড়িয়ে গেছে। এ দুটি অ্যাপের নেতৃত্বে এক দশকের মধ্যে চীন নগদ অর্থনির্ভর অর্থনীতি থেকে ডিজিটাল লেনদেননির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যবর্তী ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থার ওপর বেশি দিন নির্ভর করতে হয়নি। ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক উদীয়মান অর্থনীতিতেও এ আইডিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চীনের সফল রূপান্তর অনুসরণ করে অনেক দেশই এমন সুপার অ্যাপ-নির্ভর হয়ে উঠছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিভিন্ন অ্যাপ-নির্ভরতা বাড়লেও সুপার অ্যাপের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে না। অ্যাপল, ফেসবুক, গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো নিজস্ব পেমেন্ট সেবা নিয়ে এসেছে এবং ভেনমো ও স্কয়ারের মতো বেশ কয়েকটি পেমেন্ট অ্যাপও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ক্যানভাসে এখনো কোনো সুপার অ্যাপ দেখা যাচ্ছে না। এর পেছনে আংশিক ভূমিকা রেখেছে ডাটা প্রাইভেসি রেগুলেশন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কঠোর প্রাইভেসি আইনের কারণে বিভিন্ন অ্যাপের মধ্যে ডাটা শেয়ারের বিষয়টি সীমিত হয়ে পড়ে। এজন্য সুপার অ্যাপের জন্য কাঙ্ক্ষিত ইকোসিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে চীনের বাজারে অল্প সময়ের ব্যবধানে সুপার অ্যাপ হিসেবে দাঁড়াতে পারে আলিপে। যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রসর ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম থাকায় এবং ফেসবুক, গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টের নেতৃত্বে সহজেই সুপার অ্যাপ তৈরি করা যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।