ইউক্রেন ইস্যুতে যতটা সরব পশ্চিমা শক্তিগুলো ঠিক বিপরীত চিত্র বিশ্বের অন্যান্য সংঘাত কবলিত দেশগুলোর ক্ষেত্রে। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যতটা কঠোর বিশ্বশক্তি তার কিছুই নেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন কিংবা ইয়েমেনে সৌদি হামলার বিরুদ্ধে। বিশ্ব গণমাধ্যমও যেন একচোখা। শেষ কবে কোন ইস্যুতে এভাবে একাট্টা হয়েছে পুরো বিশ্ব তা হয়তো ইতিহাস হাতড়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পুরো বিশ্বের ভাষা এখন একই, ইউক্রেনে বন্ধ করতে হবে রুশ আগ্রাসন। রাশিয়াকে রুখতে দেয়া হচ্ছে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। প্রাচ্য, পাশ্চাত্য কিংবা মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও যেন আরেক লড়াকু সৈনিক। বর্বরতায় প্রতিদিনই প্রাণ হারানো ইউক্রেনের বেসামরিক নারী-পুরুষ-শিশুদের নানা ঘটনা তুলে ধরছে গণমাধ্যম। শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবন কিংবা প্রিয়জন হারানোর হৃদয় বিদারক সব দৃশ্য দেখে কেঁদে উঠছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তের মানুষের। অথচ গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বশক্তি, কোনো পক্ষকেই এতটা সরব হতে দেখা যায় না অন্য কোনো অঞ্চলের সংঘাতে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন, কিংবা ইয়েমেনে সৌদি জোটের হামলায় যতটা নিশ্চুপ বিশ্ব ততটাই সরব যেন ইউক্রেন ইস্যুতে। গৃহহীন ইউক্রেনবাসীর জন্য যত বিবৃতি-উদ্বেগ বিশ্বনেতা আর বিশ্লেষকদের, প্রশ্ন থেকে যায়, তার কতুটুকুই বা ছিল উদ্বাস্তু হওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার ক্ষেত্রে! পশ্চিমের দ্বৈতনীতি সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট গণমাধ্যমে। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান যুদ্ধকে যেভাবে দেখানো হয় ঠিক বিপরীতভাবে দেখানো হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধকে। স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের যে গণমাধ্যম সন্ত্রাসী আখ্যা দেয় তারাই পেট্রোল বোমা বানানো ইউক্রেন বেসামরিকদের দেখাচ্ছে লড়াকু যোদ্ধা হিসেবে। অনেকের বক্তব্যে স্পষ্ট বর্ণবাদী আচরণ। তারা বলছেন, এটা খুবই কষ্টদায়ক যে ইরাক-আফগানিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি ‘সভ্য’ একটি দেশে এমন হামলা হচ্ছে। মানুষ মিসাইল আর গোলার আঘাত থেকে বাঁচতে বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রসঙ্গত, পুরো পশ্চিমের নজর এখন ইউক্রেনের দিকে। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত অন্যান্য দেশগুলোতে ত্রাণ সহায়তা কমতে পারে এমন শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।