জীবন-অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে করোনারি হৃদরোগ নিরাময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো ব্যায়াম। কেন? স্রষ্টা এমনভাবে মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন যে, পরিশ্রম করলে আপনি ভালো থাকবেন। পবিত্র কোরআনে সূরা বালাদের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।’ অথচ ভালো থাকার নামে আমরা আজ আরাম-আয়েশে ডুবে গিয়েছি। হয়ে পড়েছি শ্রমবিমুখ। কায়িক শ্রমকে আমরা গুরুত্বহীন মনে করছি। কিন্তু চারপাশে একটু খেয়াল করলে দেখব—যারা শারীরিক পরিশ্রম করছেন, দিনরাত নানা রকম পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন, যেমন : দিনমজুর কৃষক রিকশাওয়ালা ইত্যাদি, তারাই তুলনামূলক ভালো আছেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক—এ জাতীয় রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন একেবারেই কম। আধুনিক নগরজীবনে আমরা আরাম-আয়েশের অসংখ্য উপকরণের মাঝে এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, দিনের পর দিন আমাদের কায়িক পরিশ্রম করার সুযোগ হয় না। কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক শ্রমের কোনো বিকল্প নেই। তাই সচেতনভাবে ও পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের পরিশ্রম করতে হবে—যদি সুস্থ থাকতে চাই। আর এই সচেতন ও পরিকল্পিত পরিশ্রমটাই হতে পারে ব্যায়াম। সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় তথা সার্বিক সুস্থতার জন্যে প্রতিদিন কমপক্ষে একঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। তবে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন ব্যায়াম সবচেয়ে উপকারী? ব্যায়াম মূলত তিন ধরনের অ্যারোবিক (হাঁটা জগিং সাইক্লিং সাঁতার ইত্যাদি) অ্যানারোবিক (ইনস্ট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ) ইয়োগা (যোগব্যায়াম) তিন ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী ব্যায়াম ইয়োগা। তবে পরিপূর্ণ উপকার পেতে চাইলে কিছু সময় জোরে জোরে হাঁটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ, ওজন নিয়ন্ত্রণ তথা সার্বিক ফিটনেসের জন্যে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ইয়োগা করুন এবং ঘণ্টায় চার মাইল বেগে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন ও কিছুক্ষণ জগিং করুন। লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া। সূত্রঃ একুশে টিভি