ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সরকারি সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করেছেন তিনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মিডল ইস্ট আই। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জনিয়েছে, নেতানিয়াহুর স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া এবং জর্ডানের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাতিলের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। নেতানিয়াহুর এই সফর ছিল বেশ কিছু দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক। এটাই হতো ইতিহাসে প্রথম কোনও ইসরায়েলি সরকারপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফরে আমিরাতে পা রাখার ঘটনা। তাছাড়া, মাত্র ১১ দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইসরায়েলের জাতীয় নির্বাচন। এমন মুহূর্তে আমিরাত সফরে গিয়ে বিশেষ কোনও ঘোষণা দিতে পারলে তা নেতানিয়াহুর নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়ক হতো বলে মনে করা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত গিয়ে আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর। কিছু গণমাধ্যমের দাবি, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও দেখা করতে যেতেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত সেপ্টেম্বরে আমিরাতসহ আরব বিশ্বের একাধিক দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক সম্পর্কোন্নয়ন চুক্তির পর এই সফর হতো আরেকটি মাইলফলক ঘটনা। ধারণা করা হয়, মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আগেই দেখা করেছেন নেতানিয়াহু। তাদের ওই বৈঠকগুলোই উপসাগরীয় দেশগুলোকে ইসরায়েলের কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছে। জানা গেছে, নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু বুধবার রাতে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে, কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেজ জানিয়েছে, জর্ডান এখনও নেতানিয়াহুকে আমিরাত সফরে যাওয়ার জন্য নিজস্ব আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। পত্রিকাটির বিশ্বাস, গত বুধবার জর্ডানের ক্রাউস প্রিন্স হুসেইন ইসরায়েলের দখলে থাকা পূর্ব জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। তবে নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে বিতর্কের জেরে তার ওই সফর পিছিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে নেতানিয়াহুর আমিরাত সফর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইসরালের সরকারি গণমাধ্যম কানকে নিশ্চিত করেছে, এই সফর বাতিল হয়ে গেছে। ইসরায়েল-আমিরাত কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে নেতানিয়াহুর আবুধাবি সফরসূচি নিশ্চিত করেনি। অ্যাক্সিয়সের খবর অনুসারে, ১০ দিন আগে নেতানিয়াহু নিজেই আবুধাবির যুবরাজের কাছে ফোন করে তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান। তবে আমিরাতি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। তাদের শঙ্কা, এতে ইসরায়েলের নির্বাচনে আমিরাত হস্তক্ষেপ করছে বলে ধারণা ছড়াতে পারে। তবে নেতানিয়াহু পিছু ছাড়েননি। তিনি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেনকে আমিরাতে পাঠান এবং তার অনুরোধ না মানা পর্যন্ত চাপ দিতে থাকেন। সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, আগামী নির্বাচনে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি জয়ী হতে চলেছে ঠিকই, তবে সংসদে সরকার গঠনের মতো যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।