দেশের বাইরে এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। নেপাল, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার তিন কোম্পানি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে আগ্রহ দেখালেও কম দাম হাঁকায় শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে দেশের বাইরে এখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোনো গ্রাহক মেলেনি। আর দেশের ভেতরে টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও এবং তারহীন টেলিভিশন দেখার প্রযুক্তি ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা ‘আকাশ’-ই এখন স্যাটেলাইটের প্রধান গ্রাহক। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অভ্যন্তরীণ বাজার ভালো। আমরা তো কম দাম দিয়ে বাইরে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে পারি না। কম দামে ট্রান্সপন্ডার ভাড়াও দিতে পারি না। কম দামে বাইরে বিক্রি করলে দেশের ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হবে। গ্রহণযোগ্য দাম না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত বাইরের কোন ক্রেতার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়নি।’ বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিতে বাইরের কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। উপযুক্ত দাম না দেওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগে বলেছিলাম যে, আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অর্ধেক ট্রান্সপন্ডার বাইরে বিক্রি করব এবং অর্ধেক ট্রান্সপন্ডার দেশের ভেতরে বিক্রি করব। এর ফলে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব। কিন্তু বিদেশে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের দাম কমে যাওয়ার আমরা বাইরে স্যাটেলাইটের ক্যাপাসিটি বিক্রি করতে পারছি না। সে জন্য আমরা অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করার চেষ্টা করেছি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে আমাদের স্যাটেলাইটের সেবা বিক্রি করার চেষ্টা করছি। অভ্যন্তরীণ বাজারের মধ্যে আমাদের বড় কাস্টমার হবে ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো।’ দেশে সি ব্রান্ডের স্যাটেলাইট ব্যান্ডইউথ প্রতিমাসের জন্য প্রতি মেগাহার্জ ৩ হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর কেইউ ব্রান্ডের ব্যান্ডউইথ প্রতিমাসে প্রতি মেগাহার্জ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ ডলারে। দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো কেইউ ব্রান্ডের প্রতি মেগাহার্জের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত দাম হেঁকেছিল। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ এখনও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। বিসিএসসিএল এর তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের। বাকি ২৪টি ইনসেটসি ব্রান্ডের। বর্তমানে বিদ্যমান স্যাটেলাইটগুলো সি ব্যান্ডের। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ইনসেট সি। অন্যান্য স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে দেশের স্যাটেলাইটের পার্থক্য এটিই। বিসিএসসিএল জানিয়েছে, এরইমধ্যে ডিরেক্ট টু হোম’ (ডিটিএইচ) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আকাশ ৬টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় গ্রাহক তারাই। এ ছাড়া দেশের সবকটি টেলিভিশন ও রেডিও স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে দেশের এটিএম বুথগুলোকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে। এদিকে, দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ৩১টি দ্বীপ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথের আওতায় এসেছে। ১১২টি ভি-স্যাটের মাধ্যমে ওইসব অঞ্চলে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে অপটিক্যাল ফাইবার বা টেলিফোন সেবার মাধ্যমে ব্যান্ডইউথ না থাকলেও এসব এলাকা এখন ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। আর ওইসব এলাকার বাসিন্দারা এখন ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। এর আগে, ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র সফল উৎক্ষেপণ হয়। নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পর এর ইন অরবিট টেস্টসহ (আইওটি) নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়। পাওয়া যায় সফল সংকেত।