আগামী নভেম্বর মাসে কাতারে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। প্রায় মাসজুড়ে উৎসবে ভাসবে দেশটির মানুষ। সেই উৎসবের ঢেউ স্পর্শ করবে দুনিয়ার তাবৎ ফুটবল প্রেমীদের। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করতে না পারলেও ভিন্নভাবে থাকবে বাংলাদেশের নাম। মেড ইন বাংলাদেশ লেখা ফিফার টি-শার্ট পরে অফিসিয়াল কর্মীরা ঘুরবেন সব ভেন্যুতে। পরবেন ফুটবল অনুরাগীরাও। ফিফার ৬ লাখ অফিসিয়াল টি-শার্ট তৈরির অর্ডার পেয়েছে চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানা। রাতদিন ব্যস্ততায় তা এখন তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে চলে গেছে একটি চালান। চট্টগ্রাম নগরের ফকিরহাট গোসাইলডাঙ্গায় সনেট টেক্সটাইলে ফিফার জন্য বানানো হচ্ছে বিশ্বকাপের টি-শার্ট। গেল বছরের জুলাইয়ে ৬ লাখ পিস তৈরির এ ক্রয়আদেশ দেয় রাশিয়ার ক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্পোর্টমাস্টার। এমন কাজকে দেশের জন্য গৌরবের বলছেন উদ্যোক্তারা। জানা যায়, বিশ্বকাপের পোশাকপণ্য সরবরাহে অনেকের সাথে ফিফার লাইসেন্স পেয়েছে রাশিয়ার বিখ্যাত ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পোর্টমাস্টার। তারা চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গার সনেট টেক্সটাইলকে ৬ লাখ টি-শার্ট বানানোর কার্যাদেশ দেয় গত বছর। চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে টি-শার্ট উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ৬ লাখ টি-শার্টের রপ্তানিমূল্য ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন লাখ টি-শার্ট জাহাজীকরণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ ও ২০২০ সালের ইউরো কাপের টি-শার্ট, জ্যাকেটও তৈরি করেছিল। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সনেট টেক্সটাইলের আরও দুটি পোশাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রুপটির বার্ষিক রপ্তানি দুই কোটি ডলার বা প্রায় ১৭১ কোটি টাকা। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ১০-১২টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই কারখানা থেকে পোশাক কেনে। সনেট টেক্সটাইলের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ফিফার লাইসেন্সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পণ্য তৈরি করে নিয়ে যায়। আমাদের রাশিয়ান ক্রেতাও ফিফা থেকে লাইসেন্স নিয়ে প্রায় ৬ লাখ টি-শার্ট তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। তারা যে ডিজাইন দিয়েছিল সেই অনুযায়ী আমরা টি-শার্টগুলো তৈরি করে দিয়েছি। এগুলো রাশিয়া নিয়ে যাবে। সেখানে তারা তাদের স্টলে সেগুলো বিক্রি করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ৬ লাখ পিসের অর্ডার পেয়েছিলাম। ৩ লাখ পিস টি-শার্ট গত সপ্তাহে শিপিং করা হয়েছে। আরও তিন লাখ টি-শার্ট ২৫ নভেম্বর শিপিং করছি। বিকেএমই-এর পরিচালক গাজী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এর আগেও আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপের টি-শার্ট রপ্তানি করেছিলাম। আমরা নিয়মিত পোশাক রপ্তানি করি। বিশ্বের বড় একটি ইভেন্টের টি-শার্ট তৈরি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। ফিফার অফিশিয়াল টিশার্ট তৈরিতে কঠোর সব শর্ত মানতে হয়। সেইসব শর্ত পূরণ করে দিনরাত কাজ করছেন বাংলাদেশি পোষাক শ্রমিকরা। এটি তাদের পেশাগত কাজ হলেও বর্তমান উৎপাদনে বাড়তি আনন্দ আছে বলে জানান শ্রমিকরা। একজন শ্রমিক বলেন, চার বছর পরপর বিশ্বকাপ খেলা হয়। আর তখন আমাদের তৈরি জার্সিগুলো তারা পরবে, এটা ভাবতে অনেক ভালো লাগছে। উল্লেখ্য, আগামী ২১ নভেম্বর থেকে কাতারে বিশ্বকাপ ২২তম আসর শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিশ্ব ফুটবলের সবেচেয়ে বড় আয়োজন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া মহাদেশে আয়োজিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের এ মহাযজ্ঞ।