মরিয়ম বেওয়া বলেন, ‘নিচোতো (নিচেও) ঠান্ডা, ওপরেও ঠান্ডা। গাও গরম হয় না, ঘুম আসোছে না। কোনো মতে আইত (রাত) কাটাই। আইত বেশি হইলে আরও বেশি ঠান্ডা নাগে।’ ‘আমার কাইও (কেউ) নাই বাবা, বেটা-বেটি কাইও নাই। এটেই থাকি। মাজে মাজে বদরগঞ্জ যাই। ঠান্ডাত থাকপের (থাকতে) পাওছি না। খুব কষ্ট হওচে। হামার কম্বল নাই, পাইও নাই। কাইও দেখেও না।’ নিউজবাংলাকে এসব বলছিলেন রংপুর রেলস্টেশনের বারান্দায় শুয়ে থাকা মরিয়ম বেওয়া। মরিয়মের বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নিচোতো (নিচেও) ঠান্ডা, ওপরেও ঠান্ডা। গাও গরম হয় না, ঘুম আসোছে না। কোনো মতে আইত (রাত) কাটাই। আইত বেশি হইলে আরও বেশি ঠান্ডা নাগে। শোনোচি, সরকার নাকি মানষোক ঘর দেওচে। স্যারোক কইচোং (বলেছিলাম) একটা ঘর দেন তো, দেয় নাই।’ মরিয়ম বেওয়ার মতো পড়ন্ত বয়সের শতাধিক মানুষ থাকেন রংপুর রেলস্টেশন ও নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে। দিনে এখানে বসে অথবা ঘুরে ঘুরে তারা ভিক্ষা করেন। স্টেশন এলাকায় থাকা আজিজার রহমান বলেন, ‘সহায়-সম্পত্তি নাই, ঘরবাড়ি নাই। মেলাদিন এটে (এখানে) থাকি। চোখে দেকি না। শুনোছি এটে আসি কম্বল দেয়, কই মুই তো কোনো দিন পাও নাই। ‘তোমরাই দেকো, এটে এমন করি থাকা যায়? কী আর করি, অমনে থাকি। কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলবে কেমন করি? জীবন তো চলা নাগবে।’ কয়দিন ধরে রংপুরে বইছে শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা থাকছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। এমনিতেই মরিয়ম বেওয়া, আজিজার রহমানের মতো মানুষের জীবন কষ্টে কাটে। তীব্র শীত এসে সেই কষ্ট বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ছিন্নমূল ভাসমান মানুষের সংখ্যা কত তার কোনো হালনাগাদ সরকারি তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলায় ১১ হাজার ৮০০ জন ভাসমান মানুষ আছে। ২০১১ সালের পর ভাসমান মানুষ নিয়ে কোনো তথ্য নেই বলে নিউজবাংলাকে জানান রংপুর বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান। অনেকেরই অভিযোগ, তারা কোনো ধরনের সরকারি ভাতা পান না। সরকারি বা বেসরকারিভাবে কিছুটা সহায়তা পেলে তাদের কষ্ট কমত। আব্দুর রহমান নামের ভাসমান একজন বলেন, ‘একটা মেয়ে আছে, বিয়ে দিচি, ছেলে নাই। বয়স্ক ভাতা চাইছি, পাই নাই। সরকার নাকি ঘর দেওচে। পাইও নাই, কেউ খোঁজও করে নাই। দিনোত ভিক করি, রাইতোত থাকি। যাওয়ার জায়গা নাই, স্টেশনের কাছোত ১০ বছর ধরি থাকি।’ রংপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম পাইকার জানান, ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষ নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোনো প্রকল্প নেই। এই মানুষের সংখ্যাও তাদের জানা নেই।