তিন সন্তানের সঙ্গে। (বাঁ থেকে) ফিবি অ্যাডেল গেটস, বিল গেটস, জেনিফার ক্যাথেরিন গেটস, মেলিন্ডা গেটস এবং ররি জন | গেটসইনস্টাগ্রাম থেকে বিল গেটসের দুটি পরিচয় জনপ্রিয়। এক. তিনি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। দুই. তিনি শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বরাবর ওপরের দিকেই থাকেন। তবে সে দুটি পরিচয় ছাপিয়ে পৃথিবী কিংবা পৃথিবীবাসীর জন্য সবচেয়ে কাজের কাজটা বোধ হয় তিনি এখন করছেন। ২০০৬ সালে মাইক্রোসফটের দৈনন্দিন কাজ থেকে অবসর নিয়ে স্ত্রী মেলিন্ডার সঙ্গে পূর্ণোদ্যমে লেগে পড়েন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের দাতব্য কাজে। তাঁদের ফাউন্ডেশনটি জনহিতকর কাজ ও গবেষণায় অর্থ দান করে। সে কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে ২০১৯ সালে মাইক্রোসফটের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও অবসর নেন তিনি। সে সময় তাঁর উদ্দেশ্য আরও পরিষ্কার হয়। এখন তিনি নিয়মিত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করছেন, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সোচ্চার আছেন, প্রতিদিন নিয়ম করে পড়াশোনা জারি রেখেছেন, পাশাপাশি লিখছেনও দুহাত খুলে। তাঁর সর্বশেষ বই হাউ টু অ্যাভয়েড আ ক্লাইমেট ডিজাস্টার বাজারে এসেছে গতকাল মঙ্গলবার। অর্থাৎ এই ৬৫ বছর বয়সেও তাঁর ব্যস্ত দিনগুলো শেষ হয়নি। গেটসকে সব্যসাচী আখ্যা দিয়ে লেখা শুরুর পেছনে কারণ সেটাই। আমরা আজ বিল গেটসের দৈনন্দিন কাজের তালিকা দেখব। অর্থাৎ তাঁর সকাল কীভাবে হয় থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত যা যা করেন। মূল লেখাটি বিজনেস ইনসাইডারের। সংবাদ পোর্টালটি উৎস হিসেবে বিল গেটসের নানা সাক্ষাৎকার ও তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন লেখা ব্যবহার করেছে। এটি করোনাকাল শুরুর আগে দৈনন্দিন কার্যতালিকা। তা ছাড়া সব সময় যে তিনি একই রীতিতে জীবনযাপন করবেন, তেমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। যেভাবে সকাল হয় ভ্রমণের সময় ভিন্ন কথা, অন্যান্য দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের মেডিনার বিশাল বাড়িতে ঘুম ভাঙে বিল গেটসের। তাঁর দিন শুরু হয় শরীরচর্চা দিয়ে। ২০০৮ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, ঘুম থেকে ওঠার পর গেটস সচরাচর ট্রেডমিলে খানিকক্ষণ শরীরচর্চা করেন। অনুশীলনের সময় তিনি দ্য টিচিং কোম্পানির গ্রেট কোর্স সিরিজ থেকে ভিডিও দেখেন। কোকোয়া পাফস ব্র্যান্ডের চকলেট সিরিয়াল দিয়ে সকালের নাশতা সারেন বলে দাবি বিলের। তবে মেলিন্ডা একবার বেটসি লেইন হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, বিল সাধারণত সকালের নাশতা এড়িয়ে যান। কে জানে সেটা তিনি মজা করে বলেছিলেন কি না। প্রতি সকালে সংবাদপত্র পড়েন গেটস। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং ইকোনমিস্ট পড়েন তিনি। সচরাচর শিরোনামগুলোতে চোখ বোলান। গণস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখাগুলোতে তাঁর আগ্রহ বেশি। আর সময় পেলেই নিজের ব্লগ গেটস নোটস কিংবা টুইটারে নিজের ভাবনা শেয়ার করেন। দিন কাটে কাজে কাজে দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিল গেটস তাঁর কাজগুলোর ফাঁকে পাঁচ মিনিটের বিরতি নেন। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কও তা-ই করেন। প্রতিটি মুহূর্ত যত্ন নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। দিনটাকে সৃজনশীল করার সব চেষ্টাই থাকে তাঁর। প্রচুর কাজও করেন। আর প্রতিটি কাজের হিসাব এবং নতুন ধারণা মনে রাখার জন্য সব সময় নোট নেন। দুপুরের খাবারে বিল গেটসের বিশেষ পছন্দ চিজবার্গার। রেডিটে তাঁর পছন্দের স্যান্ডউইচ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে লিখেছিলেন, ‘চিজবার্গার, চিজবার্গার, চিজবার্গার।’ অবসরে যা করেন প্রচুর বই পড়েন তিনি। সময় পেলেই পড়েন তো বটেই, প্রায়ই নতুন নতুন বই সম্পর্কে নিজের পর্যালোচনা জানিয়ে মানুষকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর লাইব্রেরিটাও বেশ বড়। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির কোডেক্স লেস্টার-এর মতো অনেক দুষ্প্রাপ্য বই তাঁর সংগ্রহে আছে। যখন পড়ছেন না কিংবা কাজ করছেন না, তখন সময় কাটান তিন সন্তানের সঙ্গে। অদ্ভুত অদ্ভুত সব জায়গায় ভ্রমণে যাওয়ার বাতিক আছে গেটসের। ছেলে ররি জন গেটসের সঙ্গে কখনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে তো কখনো মিসাইল উৎক্ষেপণকেন্দ্র দেখতে যান। বিলের ভাষায়, ‘ও আমার সঙ্গে শিখতে ভালোবাসে।’ মোট কথা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভালোবাসেন বিল। এর পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে ব্রিজ খেলাও তাঁর পছন্দের। দিন শেষে থালাবাসন মাজেন বিল গেটস দিন শেষও করেন কাজ দিয়েই। ২০১৪ সালে রেডিটে গেটস লিখেছিলেন, প্রতি রাতে তিনি থালাবাসন পরিষ্কার করেন। সঙ্গে যোগ করেন, ‘অন্যরাও সাহায্য করে তবে আমি আমার মতো করে করতে ভালোবাসি।’ রাতে এমনভাবে ঘুমাতে যান, যেন সকালে চোখ মেলার আগে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানোর মতো সময় পান।