আফগানিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাবেক বোর্ড সদস্য শাহ মাহমুদ মেহরাবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যদি তাদের কাছে থাকা আফগানিস্তানের সংরক্ষিত তহবিল উন্মুক্ত না করে তবে আফগান অর্থনীতি ধসে পড়বে। বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও আইএমএফে সংরক্ষিত আফগানিস্তানের তহবিল স্থগিত করা হয়। শাহ মাহমুদ মেহরাবি বলেন, মার্কিন তহবিল বিভাগ ও আইএমএফের কাছে সংরক্ষিত এই তহবিলে স্বল্পমাত্রায় হলেও বর্তমানে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণকারী তালেবান কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে দেয়া উচিত। তা না হলে হলে আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং বিপুল আফগান পরিবার দরিদ্রতার সীমানার নিচে পড়ে যাবে। বর্হিবিশ্বে আফগানিস্তানের মোট নয় বিলিয়ন ডলারের তহবিল সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে প্রায় সাত বিলিয়ন ডলারের তহবিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। এদিকে জাতিসঙ্ঘ সতর্কতা জারি করেছে, আফগানিস্তানে মানবিক সংকট গুরুতর হচ্ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশটির এক কোটি ৮০ লাখ লোকের জীবন ধারণের জন্য মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী আগ্রাসন চালায়। মার্কিন নেতৃত্বে আগ্রাসনে দেশটির তৎকালীন ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়। চলতি বছরের মে মাসে সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরে নাইন-ইলেভেনের ২০তম বার্ষিকীতে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করার কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সোমবার রাতে আফগানিস্তান ছাড়ে মার্কিন বাহিনী। মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান। ৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সূত্র : তোলো নিউজ