মাত্র ১২২ রানের লক্ষ্য, তা ছুঁতে গিয়ে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে এরপরও বাংলাদেশ ৮ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে। কারণ আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহান দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তারা ষষ্ঠ উইকেটে ৪৪ বলে ৫৬ রানের যে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তাতেই এ সহজ জয় এসেছে। ফলে টানা দুই ম্যাচে শক্তিশালী অসিদের হারিয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক টাইগাররা। বুধবার রাতে মিরপুরে সিরিজের টি২০ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করে তেমন সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশী বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৭ উইকেটে মাত্র ১২১ রান তুলতে পারে তারা। টি২০-তে এটি আগে ব্যাট করে পুরো ওভার খেলে অসিদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন ‘কাটার ও স্লোয়ার’ মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। জবাবে ১৮.৪ ওভারে পেসার জশ হ্যাজলউডকে পেরিস্কোপ শটে আফিফ যে বাউন্ডারি হাঁকান তাতেই ৫ উইকেটে ১২৩ রান তুলে জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার ২৩ রানে জয় পায় টাইগাররা। এমন ব্যাটিং খুব কমই করেছে অস্ট্রেলিয়া দল। বিশেষ করে টি২০ ফরমেটে এমন কোণঠাসা হয়ে ব্যাট চালানো, বড় শট না খেলে ক্রিজে টিকে থাকার চেষ্টা একেবারেই বেমানান। তবে অসি ব্যাটসম্যানরা বাধ্য হয়েছেন, পরিস্থিতি তাদের খোলসবন্দী করেছে এবং তারা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৩২ রানের লক্ষ্য ছুঁতে গিয়ে ২০ ওভারে ১০৮ রানে মুখ থুবড়ে পড়ে অসিরা। সে কারণেই দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্ক থেকেছেন অসি ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত কিছু ক্রিকেটার না থাকায় নিজেদের সেরা একাদশই তারা খেলিয়েছে প্রথম ম্যাচে, সেই একাদশটাই বহাল রেখে নামে তারা বুধবার। পরিকল্পিত ব্যাটিংয়ে ধীরলয়ে শুরু করেও অবশ্য রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশী স্পিনারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে দ্রুত রান করতে পারেনি তারা। এদিনও শেখ মাহেদির অফস্পিনে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন এ্যালেক্স ক্যারি (১১ বলে ১১)। আর ষষ্ঠ ওভারে বাঁহাতি মুস্তাফিজ বোল্ড করে দেন জশ ফিলিপেকে (১৪ বলে ১০)। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ৩২ রান তোলে অসিরা ২ উইকেট হারিয়ে। এরপর ৫২ বলে ৫৭ রানের একটি দুর্দান্ত জুটি গড়েন মিচেল মার্শ ও ময়সেস হেনরিকস। নাসুম আহমেদকে অসি ইনিংসের একমাত্র ছক্কা হাঁকান হেনরিকস। এরপরও ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৫৩ রান করতে পেরেছে অসিরা। তিনি সাকিবের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হয়ে যান ২৫ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩০ রান করে। হেনরিকসের বিদায়ের পর দ্রুতই ফিরে গেছেন ক্রিজ কামড়ে থাকা মার্শও। এদিনও তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন। এবার ৪২ বল খেলে ৫ চার হাঁকিয়েছেন তিনি। শরিফুল ইসলামের অপস্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ১৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ম্যাথু ওয়েডকে (৪) বোল্ড ও এ্যাশটন এ্যাগারকে (০) কট বিহাইন্ড করেন ‘ডেথ ওভারে’ দুর্দান্ত বোলিংয়ে পারদর্শী। ধীরগতির উইকেটে সবসময়ই অসাধারণ মুস্তাফিজ। তার দারুণ মিতব্যয়ী বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ১২১ রানে থামে অসিরা। আগে ব্যাট করে টি২০ ক্রিকেটে পুরো ওভার খেলে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১৩৩। সেটি তারা ২০১০ সালে পার্থে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিল। এবার নতুন রেকর্ড হলো তাদের। এদিন ৫০টি ডট বল করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা, হজম করেছেন মাত্র ১ ছক্কা ও ১২টি চার। মুস্তাফিজ ৩ ও শরিফুল ২ উইকেট নেন। প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক নাসুম উইকেটশূন্য এদিন ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে। সবচেয়ে মিতব্যয়ী মাহেদি ৩ ওভারে ১২ ও সাকিব ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। রান তাড়া করার আগেই আত্মবিশ্বসী ছিল বাংলাদেশ। কারণ, প্রথম ম্যাচে অসিদের হারিয়ে দেয়া এবং দ্বিতীয় ম্যাচে এত কম রানে তাদের বেঁধে রাখা। এর পাশাপাশি একটি পরিসংখ্যানও পক্ষে ছিল টাইগারদের। আগের ১০৩ ম্যাচে ৩৫ জয়ের মধ্যে ১৯টিই ছিল পরে ব্যাট করে। কিন্তু ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। এবারও ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য সরকার, সাবধানে শুরুর পরও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তাকে শূন্য রানে বোল্ড করে দেন মিচেল স্টার্ক। মাত্র ২ বল খেলতে পেরেছেন তিনি। পরের ওভারে নাইম শেখও (৯) জশ হ্যাজলউডে বোল্ড হয়ে যান। ২১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সতর্ক হয়ে ব্যাট চালিয়েছেন সাকিব-শেখ মাহেদি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষ করে বাংলাদেশ ২ উইকেটে মাত্র ৩৮ রান নিয়ে। তৃতীয় উইকেটে শেখ মাহেদি ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও শেখ মাহেদি। রানের গতিটাও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর হুট করেই বিপদ নেমে আসে। ১৭ বলে ৪ চারে ২৬ রান করা সাকিব বোল্ড হয়ে যান এ্যান্ড্রু টাইয়ের ইনসুইঙ্গারে। পরের ওভারে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও (০) এ্যাশটন এ্যাগারের করা একেবারে বাইরের বল মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ইনসাইড এজ হয়ে। কিছুক্ষণ পর মাহেদিও সাজঘরে ফেরেন এডাম জামপার লেগস্পিনে। তিনি ২৪ বলে ১ ছক্কায় ২৩ রান করেছিলেন। ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান জুটি বাঁধেন। যদিও আফিফ এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন টাইয়ের পেসে ব্যাট চালাতে গিয়ে লাইন হারিয়ে। তবে রিভিউয়ে বেঁচে গেছেন তিনি। আর সেই ফিরে পাওয়া জীবন নিয়েই পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে হ্যাজলউডকে রাইজিং ডেলিভারিতে গ্লাইড করে থার্ডম্যান দিয়ে চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকেছেন মাত্র ৪৪ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়ে। আফিফ ৩১ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৩৭ রানে এবং সোহান ২১ বলে ৩ চারে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। ফলে ৮ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ১৮.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৩ রান তুলে। একমাত্র এ্যাগারই দারুণ বোলিং করেছেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়েছেন ১ উইকেট নিয়ে। স্কোর॥ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস- ১২১/৭; ২০ ওভার (মার্শ ৪৫, হেনরিক্স ৩০, স্টার্ক ১৩*; মুস্তাফিজ ২/২৩, শরিফুল ২/২৭)। বাংলাদেশ ইনিংস- ১২৩/৫; ১৮.৪ ওভার (আফিফ ৩৭*, সাকিব ২৬, মাহেদি ২৩, সোহান ২২*; এ্যাগার ১/১৭) ফল ॥ বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আফিফ হোসেন। সিরিজ ॥ ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে। সূত্রঃ একুশে টিভি