দিনভর ঘুম ঘুম ভাব, কোনও কাজেই বিশেষ উৎসাহ পান না। কিংবা যত্ন-আত্তি করা সত্ত্বেও হু হু করে চুল ঝরে যাচ্ছে। আবার কম খেয়ে ওজন বাড়ছে আর বার বার ময়েশ্চারাইজার লাগিয়েও ত্বক শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব উপসর্গের মূল কারণ কিন্তু খাবারে আয়োডিনের অভাব। আয়োডিন এমন একটা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য জরুরি। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস হল খাবারের এমন এক উপাদান যা অত্যন্ত অল্প পরিমাণে খাবারে থাকলেই শরীরের চাহিদা মেটে। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১৯০ কোটি মানুষের দৈনিক খাবারে আয়োডিনের অভাব আছে। এদের মধ্যে ২৮.৫ কোটি স্কুলের বাচ্চা। নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আয়োডিনকে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি ডিজঅর্ডার সম্পর্কে বিশ্বের সব দেশের মানুষকে সচেতন করতে হু উদ্যোগী হয়েছে ১৯৬০ সাল থেকেই। আয়োডিন অত্যন্ত অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও এর অভাবে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে হবু মায়ের যদি আয়োডিনের অভাব থাকে তাহলে জড়বুদ্ধি ও স্প্যাস্টিক শিশুর জন্ম ছাড়াও থাইরয়েডের অসুখ বা গলগণ্ড-সহ নানা ধরনের সমস্যা হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি ডিজঅর্ডার (আইডিডি)। এছাড়া আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে মস্তিষ্কের বিকাশ কম ও পেশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জড়বুদ্ধি, কম বুদ্ধি ও স্প্যাস্টিক শিশুদের এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হবু মায়ের খাদ্য তালিকায় যথাযথ পরিমাণে আয়োডিনের অভাব। আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটে কতটা আয়োডিন প্রয়োজন সেই নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা তালিকা আছে। প্রতিদিন কার কতটা আয়োডিন প্রয়োজন। ( ১ গ্রাম = ১ লাখ মাইক্রোগ্রাম)। * ০ থেকে ৬ মাস বয়সে ১১০ মাইক্রোগ্রাম * ৭ থেকে ১২ মাস ১৩০ মাইক্রোগ্রাম * ১ থেকে ৩ বছরে ৯০ মাইক্রোগ্রাম * ৪ বছর থেকে ৮ বছরে ৯০ মাইক্রোগ্রাম * ৯ বছর থেকে ১৩ বছরে ১২০ মাইক্রোগ্রাম * ১৪ বছর থেকে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম * হবু মায়েদের ২২০ মাইক্রোগ্রাম * যে বাচ্চারা মায়ের দুধ খায়, সেই মায়েদের ২৯০ মাইক্রোগ্রাম। আমাদের গলার কাছে থাকা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ও অন্যান্য হরমোন বেরোয় যা আমাদের বুদ্ধির বিকাশসহ নানান শারীরিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। অল্পবিস্তর আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। আয়োডিনের অভাবে আরও যে সমস্যা হয়- * থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বেড়ে যায়, থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে গিয়ে হাইপো-থাইরয়েডিজম হয়, বুদ্ধির বিকাশ কমে যায়, মানসিক অসুস্থতা শুরু হয় এমনকি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। * স্নায়ু ও সংলগ্ন পেশির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গিয়ে পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। * হবু মায়ের আয়োডিন ঘাটতি হলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হয় না, মানসিকভাবে বিপন্ন ও স্প্যাস্টিক শিশুর জন্ম হয়। এমনকি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ভ্রূণ মারা যেতে পারে। * বাচ্চাদের কানে কম শোনা ও কথা বলতে না পারার মত সমস্যার ঝুঁকি থাকে, জন্মের পর আয়োডিনে অভাব হলে বাচ্চা ক্রমশ জড়বুদ্ধি হয়ে পড়ে। বাচ্চার বেড়ে উঠতে সমস্যা হয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে শিশুটি ডোয়ার্ফ বা বামন হয়ে যেতে পারে। * এ ছাড়া চুল ঝরে যাওয়া, ওজন বাড়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাবার মত সমস্যা হয়। এবার জেনে নেই কোন কোন খাবার থেকে আমরা কতটা আয়োডিন পেতে পারি সে সম্পর্কে... * ১/৪ চা চামচ লবণ থেকে মেলে ৯৫ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন * ১ পিস সামুদ্রিক মাছে ৬৫০ মাইক্রোগ্রাম * ১টা কলায় ৩ মাইক্রোগ্রাম * ১টা বড় ডিমে ১২ মাইক্রোগ্রাম * এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া, মাংস, সমুদ্রের সবরকম মাছ ও অন্যান্য সি ফুড আর দুধেও আয়োডিন পাওয়া যায়। প্রমাণিত না হলেও কিছু বিজ্ঞানীর মতে, আয়োডিনযুক্ত লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে কোভিড-১৯ ভাইরাস জব্দ করা যায়।