মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগী নির্বিঘ্ন রাখতে মসজিদে মুসল্লীদের উপস্থিতির উপর বিধিনিষেধ বাতিল এবং দেশের সকল নাজেরা ও হেফজখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের প্রধান, মুফতিয়ে আযম আল্লামা আবদুচ্ছালাম চাটগামী। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, গত বছরাধিককাল যাবত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিদ্যমান। এতে বিশ্বের বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ ও আক্রান্ত হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এ সময়ে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল। উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মসজিদ-মাদরাসা উন্মুক্ত থাকায় লাখ লাখ মাদ্রাসা ছাত্র, উলামায়ে কেরাম ও মুসল্লীদের ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার ও দোয়ার বরকতে বাংলাদেশে করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম হয়েছে। চিঠিতে মুফতি আবদুচ্ছালাম চাটগামী আরো বলেন, আজ থেকে পবিত্র মাহে রমযানুল মোবারক শুরু হয়েছে। এই মাস ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময়। এই মাসে রোযা, নামায, যাকাত ইত্যাদি ফরয আমলসমূহের সাওয়াব সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া সকল নফল আমলসমূহের সাওয়াব ফরযের সমতুল্য হয়ে যায়। এই মাসে শ্রমিক মজদুরসহ অধিনস্থদের কাজ সহজ করলে গুনাহ মাফ করা হয়। রোযাদারগণকে আহার ও ইফতার করালে এক এক রোযার সাওয়াব বৃদ্ধি এবং জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি লাভ হয়। এসব কিছু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. এর সিদ্ধান্ত, যেটা অনুসরণ করা সকল মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। আর এসব অমান্য করা আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল সা. এর অবাধ্যতার শামিল। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুসলমানকে এর উপর পূর্ণ আমল করার তাওফীক দান করুন; আমীন। চিঠিতে মুফতিয়ে আযম আব্দুচ্ছালাম চাটগামী আরো বলেন, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে দেশব্যাপী মাদরাসাসমূহ বন্ধের ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি মসজিদসমূহে মুসল্লীদের উপস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এতে করে সাধারণ মুসলমানদের উপর জামাআতে নামায আদায়সহ শরীয়তের হুকুম-আহকাম আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাজেরা ও হেফজখানা বন্ধ ও মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্ধারণ করে সরকারি বিধি জারি কোনভাবেই যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত নয়। কারণ, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের আকুতি, মহামারির এমন ভয়াবহ বিপদ ও জীবনের অনিশ্চিত সময়ে তারা প্রাণভরে আল্লাহর ইবাদত করবেন, আল্লাহর ঘরে গিয়ে তাওবা, ইসতিগফার, নামায, তিলাওয়াত ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করবেন এবং নিজের জন্য, জাতির জন্য ও দেশের জন্য সাহায্য চাইবেন। কিন্তু তাদেরকে এটা করতে না দেওয়া মানসিক নিপীড়নের শামিল। এতে আল্লাহর ক্রোধ ও মহামারির বিপদ বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা বেড়ে যায়। তাছাড়া গত দশ মাস ধরে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা এবং মক্তব/হেফজখানা চালু থাকাকালীন কোন মাদ্রাসায় করোনায় মৃত্যুর খবর দেখা যায়নি। চিঠিতে তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী চলমান লকডাউন পরিস্থিতেও শহর এবং গ্রাম এলাকার প্রত্যেকটি বাজার, নিত্য পণ্যের দোকান ও ব্যাংকসমূহে দীর্ঘ সময় মানুষের জনসমাগম ও উপচে পড়া ভিড় চলছে। গার্মেন্টসসহ কলকারখানা চালু রয়েছে। অথচ আল্লাহর হুকুম ফরয নামায, জুমা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও তারাবিহ আদায়ের অল্প সময়ের জন্য মুসল্লিদের মসজিদে উপস্থিতির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ ও সংখ্যা নির্ধারণ করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি মসজিদের জামাতে মুসল্লীদের উপস্থিতিসহ অন্যান্য যে সকল প্রতিবন্ধকতা জারি করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ কোনরূপ মানসিক কষ্টভোগ ও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাচ্ছন্দে ও স্বাধীনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করতে পারেন। পাশাপাশি দেশের সকল নাজেরা ও হেফজখানা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তাতে হাজার হাজার ছাত্রের কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির-আযকারের বদৌলতে দেশ ও জাতির উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে। অন্যথায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এবং করোনা মহামারির বিপদ আরো বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা তৈরি হবে। দয়া করে মুসলমানদের ধর্মীয় ইবাদত আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না। মুসল্লীরা মসজিদে গেলে করোনা ছড়াবে না, ইনশাআল্লাহ। বরং এতে আল্লাহর রহমত ও সাহায্যের উচ্চ আশা করা যায়।