করোনা ভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় সরকার থেকে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৪ এপ্রিল) সূচকের বড় পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারে লেনদেন। তবে এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন বেড়েছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাল দিতে এক সপ্তাহের লকডাউন দিয়েছে সরকার। এতে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। যার ফলস্বরূপ দিনের লেনদেন শেষে বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে দেশের শেয়ারবাজারে। এই ধসের মধ্যে পড়ে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে নেই হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর আগে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপের শুরুতেও গত বছর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই সংবাদে ৯ মার্চ ভয়াবহ ধস নামে শেয়ারবাজারে। একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। আর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায় ১৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। বড় ওই ধসের পরও শেয়ারবাজরে ধস চলতে থাকে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় টানা ৬৬ দিন বন্ধ রাখা হয় শেয়ারবাজারের লেনদেন। তবে বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর গত বছরের ৩১ মে শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন শুরু করেন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাবও পড়ে। কিন্তু করোনার শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই এখন নতুন করে আবার ধাক্কা খেল শেয়ারবাজার। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৮১ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইর শরীয়াহ সূচক ৩৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮২ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১৬৬ ও ১৯০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। রোববার ডিএসইতে ৫২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে ৭০ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ৪৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল। রোববার ডিএসইতে ৩২৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭টি কোম্পানির, কমেছে ২৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর। রোববার লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো-বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি, বেক্সিমকো ফার্মা, এশিয়া প্যাসিফিক, লংকাবাংলা, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বিএটিবিসি ও সামিট পাওয়ার। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৫৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭১৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ১৮৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির কোম্পানির শেয়ার দর। রোববার সিএসইতে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৫০ কোটি টাকা বেশি। আগের দিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার।