বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট এবং জাহাজ চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে দুই দেশের সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে যাবে বাংলাদেশ বিমান। আরেকটি সুখবর হচ্ছে, শিগগিরই চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে আমরা একটা শিপিং লাইন চালু করব।’ এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মুহামেদ সলিহ। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে একান্ত বৈঠকও করেন দুই নেতা। তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ কমিশন গঠনসহ চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা মুহামেদ সলিহর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সই করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপ এতে সম্মত হয়েছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনো খুব বেশি আমরা অগ্রসর হইনি। এজন্য আমরা ওদের (মালদ্বীপ) কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমরা পিটিএ করতে চাই, যেটা ভুটানের সাথে আমরা করলাম কিছুদিন আগে। ডাবল ট্যাক্সেশন যাতে না হয়, সেজন্য একটা প্রস্তাব আমরা দিয়েছি এবং কাস্টমসের ওপর আমরা কাজ করছি। উভয় দেশ প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন অব ইনভেস্টমেন্টের ওপরও আমরা কাজ করছি।’ দুই দেশের সরকারপ্রধানের আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্য যাতে আরও বেশি পাঠানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফিশারিজ, পর্যটনে মালদ্বীপের সঙ্গে কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়, কানেকটিভিটি কীভাবে বাড়োনো যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে।’ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সফরে চারটি এবং এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা তুলে ধরে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের যত ধরনের আইনগত ভিত্তি দরকার, সেগুলো আমরা করেছি। এখন আমাদের সম্ভাবনা যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করব।’ এ সময় বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করতে প্রতি বছর বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) নিয়ে হওয়া সমঝোতা স্মারক হওয়ায় এখন নিয়মিতভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পথ তৈরি হলো।’ সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা তুলে ধরে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ বলেন, ‘আমরা সমন্বিত যৌথ কমিশন করতে যাচ্ছি, যাতে দৃঢ় আইনি ভিত্তি ও কাঠামোর ওপর ভর করে আমরা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। এর মাধ্যমে নিয়মিত সব ইস্যুকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি। কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়ে যাতে ডাবল ট্যাক্সেশন এড়ানো যায়। এই সমঝোতা স্মারকগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়েও দুপক্ষ একমত হয়েছে।’ এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ে মালদ্বীপ বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন আবদুল্লাহ শহিদ।