প্রিয় নবীজীর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত দাড়ি, অতি আধুনিকতা এবং কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা... এক. ২০১৪ সালে কাতার ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করার পরের কথা। একদিন কাতারের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আমাকে তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। দেখা করার পর কথার ফাঁকে জানালেন। একটি গবেষণা পত্রিকার ভাষা-এডিটর হিসেবে তিনি আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। এরপর তিনি আমার মুখের (পড়তে হবে দাড়ির) দিকে তাকিয়ে কিছু কথা বললেন। তাঁর চাহনি এবং কথার মর্মার্থ থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, আমাকে এই চাকুরীর যোগ্য হতে হলে অবশ্যই কিছু পরিবর্তন জরুরি! তবে আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুগ্রহে সেই পরিবর্তন আসেনি। সম্ভবত সে কারণে আমার চাকুরীর বিষয়টি আর সামনে এগোয় নি। একদিকে কাতার ইউনিভার্সিটির চমৎকার শিক্ষাগত পরিবেশ, অপরদিকে শিক্ষকের আন্তরিকতা সব মিলিয়ে আমার খুব ইচ্ছা, যদি আল্লাহ তায়ালা তৌফিক দেন তাহলে এখানেই মাস্টার্স করব। যেহেতু ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স লেভেলে স্কলারশিপ নেই। তাই আমাকে নিজ খরচে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে ঐ চাকুরিটা হলে আমার খুবই উপকার হতো। অন্তত আমার ধারণা তাই ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। তাই একটু মন খারাপ ছিল। তবে আল্লাহ তায়ালার দয়ায় চাকুরীটা ছাড়া খুব সহজে এবং সুন্দরভাবে মাস্টার্স সম্পন্ন করার সুযোগ করে দেন। এবং কয়েক বছর পর কাতার ইউনিভার্সিটিতে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে নিয়োগেরও ব্যবস্থা করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ। দুই. পরিচিত অনেককে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিকে অন্যান্য সুন্নতের পাশাপাশি দাড়ির প্রতি যত্নবান হোন। কিন্তু ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে অনেকে সেভ পর্যন্ত করে ফেলে!? এরকম অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে। তারা দাড়িকে নিজেদের উন্নতির পথে বাধা মনে করেন। তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশায় দাড়ির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন না। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলে, দাড়িতো ইসলামের মৌলিক কিছু না! তাই ইসলামের খেদমত করতে হলে শরীয়তের এটুকু ছাড় দিতেই হবে। তাই ইসলামের অধিক খেতমতের ইচ্ছায় তারা দাড়ি কাটেন। অনেকে সেভও করেন। যদিও পরবর্তীতে এসব ভাইদের মাধ্যমে ইসলামের কতটুকু খেতমত হয় তা জানি না। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, এসব ভাইয়েরা ইসলামের অন্যান্য জরুরি আমলগুলোও বাদ দিতে থাকেন। আর সব কিছু হয় সেই ইসলামের খেতমত নামক যুক্তির অন্তরালে! তিন. চাকুরীর সূত্রে অনেক সময় এমন অনেক অনুষ্ঠানে যেতে হয় যেখানে হয়তো কারো মুখে দাড়ি নেই। অনেক সময় দেখা গেল। উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যার মুখে দাড়ি। বিষয়টি অনেকের চোখে বাধে। অন্যদের আচার-আচরণ দেখে অনেক সময় নিজের কাছেও সংকোচ চলে আসে। তবে আল্লাহ তায়ালার দয়ায় মুখে দাড়ি থাকার কল্যাণে অনেক অনেক অকল্যাণ থেকে নিজেকে দুরে রাখার সুযোগ হয়। দাড়ি না থাকলে হয়তো তার সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। বা অন্তত কঠিন হতো। যেমন ধরুন, আপনার মুখে দাড়ি থাকলে হুট করে কোনো নারী এসে আপনার সাথে মোসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিবে না। যা অন্য অনেকের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই আমি দাড়ি সুন্নত নাকি ওয়াজিব সেই কঠিন ফিকহি আলোচনায় না গিয়ে বলি। দেখুন, দাড়ি একজন পুরুষের দ্বীনী সুরক্ষার অন্যতম মাধ্যম। বিশেষত যুবকদের জন্য। দাড়ির কল্যাণে আপনি অনেক অনেক শরীয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। একজন নারী যেমন পর্দার কল্যাণে অনেক পাপাচার থেকে দুরে থাকতে পারে।ঠিক দাড়ির কল্যাণে একজন পুরুষ অনেক পাপাচার থেকে দুরে থাকতে পারে। তাই দাড়িকে ওয়াজিব বা সুন্নতের দৃষ্টিতে না দেখে, এটিকে নিজেদের ধর্মীয় নিরাপত্তা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করুন। আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজেই শুরু করে দেখুন। দেখুন দাড়ি কিভাবে আপনাকে অনেক পাপাচার থেকে সুরক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। দেখুন। জাস্ট ট্রাই এন্ড জাজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনকে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের সুন্নার আলোকে আলোকিত করার তৌফিক দান করুন। দুনিয়ার সব বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমীন।