সাম্প্রতিক সময়ে এক ব্লগার ও এক প্রকাশক হত্যার বিচারের দু’টি রায় ঘোষিত হয়েছে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন সাজার রায় দেন। আরেক মামলায় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন একই আদালত। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় অভিজিতের স্ত্রী বন্যাও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদি হয়ে ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেন। অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যা করে আসামিরা অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। দু’টি মামলা পৃথক হলেও হত্যার প্রেক্ষাপট, কারণ ও মোটিভ এক ও অভিন্ন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে এটা নিশ্চিত করা আইনের শাসনের পূর্বশর্ত। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া বা সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনসিদ্ধ নয়, গ্রহণযোগ্যও নয়। তবে একটি বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। আসামিরা সংক্ষুব্ধ হলেন কেন? কেন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন? বিজ্ঞানচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্ম ও কৃষ্টিকে আঘাত ও বিদ্বেষ ছড়ানোও অপরাধ। একটি সঙ্ঘবদ্ধগোষ্ঠী স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে এ কাজটি করে যাচ্ছে। অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে তারা কথা বলে না; একমাত্র ইসলাম ধর্মই তাদের টার্গেট। ফয়সল আরেফিন দীপন ও অভিজিৎ রায় স্কুলজীবন থেকে পরস্পরের বন্ধু এবং নাস্তিক্যবাদী দর্শনের প্রচারক-প্রকাশক। দীপনের প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতি থেকে অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে দু’টি বই প্রকাশ করা হয়। এ দু’টি গ্রন্থে ইসলাম, ঐতিহ্য ও ধর্মবিশ^াসকে কটাক্ষ করা হয়েছে পরিকল্পিতপন্থায়। অন্য দিকে অভিজিৎ রায় প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত মুক্তমনা ব্লগের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হলো ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আচরিত ধর্মবিশ^াস ও যাপিত জীবনধারা আহত করার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধর্মাশ্রয়ী মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। রাজপথে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখা দেয়। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি কঠোর আইন ও বিধি প্রণয়ন করে বিদ্বিষ্ট ব্লগার ও বিতর্কিত প্রকাশককে নিবৃত্ত করতে পারত তা হলে এই অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকাণ্ড নাও ঘটতে পারত। অভিজিৎ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মতপ্রকাশে সাহস দিতেই এ রায়। কেননা এ হত্যার উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা বিঘিœত করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ লেখালেখি ও মতপ্রকাশ করতে না পারে।’ দীপন মামলার রায়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘বই প্রকাশের কারণে মানুষ হত্যাকারীরা দেশ ও সমাজের শত্রু।’ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ধর্মবিশ^াস ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মর্মমূলে আঘাত হেনে ‘বই প্রকাশ’ সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রয়াস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চা আনলিমিটেড নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে এ জাতীয় প্র্যাকটিস নেই। আমাদের দেশে আদালত বা সরকার বা কোনো ক্ষমতাসীন সম্মানিত রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বই লিখলে বা মতপ্রকাশ করলে তাকে কি রেহাই দেয়া হবে? স্বাধীনতা ও চর্চার নামে ধর্মবিশ^াসের অবমাননা বা নবী-রাসূলদের প্রতি কটাক্ষ পাপ ও অপরাধ। আদালতের পর্যবেক্ষণের দ্বারা নাস্তিক্যবাদী লেখক ও ব্লগাররা উৎসাহিত হতে পারেন। আপিল আদালত বিষয়টি কগনিজেন্সে নেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর রেওয়াজ চালু থাকলে এবং আইনের মাধ্যমে তাদের নিবৃত্ত করা না গেলে সংক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আইন হাতে তুলে নেয়ার জন্য প্ররোচনা পেতে পারে। হয়তো তাদের কেউ কেউ ফাঁসিতে ঝুলতেও দ্বিধা করবে না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভাবতে হবে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি করতে হবে। ইসলাম ধর্মের শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত অভিমত হলো মুরতাদ (স্বধর্মত্যাগী) ও নবী অবমাননাকারীদের (শাতিমুর রাসূল) সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। দেড় হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাসে এ জাতীয় বহু নজির (খবমধষ চৎবপবফবহপব) রয়েছে। ইসলাম ধর্মে শরিয়াহ আইনের ব্যাখ্যা দেবেন প্রাজ্ঞ মুফতিগণ, বিচার করবেন আদালত এবং দণ্ড কার্যকর করবেন প্রশাসন। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে দণ্ড কার্যকর করার সুযোগ নেই, বিধান নেই। ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপহাস ও কটাক্ষ করার জন্য ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র (ঋৎববফড়স ড়ভ ঊীঢ়ৎবংংরড়হ) নীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। আমরা মনে করি মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও সুনির্দিষ্ট শর্ত ও নীতিমালা থাকা চাই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নিবর্তন, চক্রান্ত, উচ্ছেদ, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মাবমাননা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, হজরত মুহাম্মদ সা:-কে ব্যঙ্গ, কটূক্তি ও উপহাস করে বক্তব্য প্রদান, পুস্তক প্রকাশ, নাটক প্রচার ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ইসলাম ও মহানবী সা: ওলামায়ে কেরাম, মাদরাসা, ইসলামী ঐতিহ্য-সভ্যতা ও নিদর্শন নিয়ে যেভাবে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ শুরু হয়েছে তাতে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষ শঙ্কিত। এসব কথা যারা বলে ও বিশ্বাস করে তারা চরম সাম্প্রদায়িক, আজন্ম অন্ধ ও সাঙ্ঘাতিক কপট। সাম্প্রদায়িকতাদুষ্ট এ অসুস্থ প্রবণতা রোধ করা না গেলে আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে আইন প্রণয়ন করে ধর্মাবমাননা বন্ধ করা আশু প্রয়োজন। ১৬ কোটি নবীপ্রেমিক মুসলমানের প্রিয় মাতৃভূমিতে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর শানে যারা বারবার বেয়াদবি করে যাচ্ছে, তাদের যদি আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হই তাহলে পুরো জাতির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব ও ভয়াবহ শাস্তি নেমে আসতে পারে। ইতিহাসে তাঁর দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। যে দেশে জনপ্রিয় জাতীয় কোনো রাজনৈতিক নেতা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করলে জেলে যেতে হয়, দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়, সে দেশে ইসলাম ও বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করে কেউ পার পেয়ে যাবে সেটা হতে পারে না। ২০১২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্লগার, ফেসবুক আইডি হোল্ডার ও নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় সাম্প্র্রতিক সময়ে তাদের আস্ফালন ও বেয়াদবি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা মনে করি কেবল ইসলাম নয় যেকোনো ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি বিষোদগার নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাম্প্র্রদায়িক সম্প্র্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রর্দশন অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম, মহানবী সা: ও সাহাবায়ে কেরাম কোনো দল বিশেষের নয়। প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের লালিত ধন। রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় আদর্শ কিন্তু এক ও অভিন্ন। রাজনৈতিক বিবেচনায় ধর্মকে টার্গেট করা শুধু ভুল নয়, আত্মঘাতী পদক্ষেপ। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোক্রমেই ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ নয়। বহু মুক্তিযোদ্ধা ধর্মপরায়ণ ও মহানবী সা:-এর ভালোবাসায় তাদের মন সিক্ত ও উদ্বেলিত। ধর্মবিশ্বাস যদি কারো না থাকে, না থাকুক কিন্তু তিনি ধর্মের প্রতি উপহাস, ব্যঙ্গ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না। ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন সরস্বতী দেবীর ছবি এঁকেছিলেন শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। বজরং দল ও আরএসএস-এর উগ্র সাম্প্রদায়িক কর্মীরা তাকে হত্যার হুমকি দেয়। তাদের বক্তব্য ছিল, মকবুল তাদের দেবীকে যৌন অবেদনময়ীরূপে চিত্রিত করেছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে বিজ্ঞ আদালত রায় দিলেন, মকবুলের আঁকা চিত্রটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত বিবরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারপরও এ গুণী শিল্পীর প্রতি প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকে। অবশেষে তিনি প্রিয় মাতৃভূমি ভারত ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান এবং ওখানেই তার মৃত্যু ঘটে। ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে তাকে সমাহিত হতে হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু ধর্ম, ধর্মীয় গুরু বা শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্ম, ধর্মীয় গুরু নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয় না, সমালোচনা করা হয় না। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। এখানে ইসলাম ধর্ম, মহানবী সা: ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যঙ্গ ও উপহাস করা রীতিমতো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিদেশী কোনো প্রভুর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা কুশীলবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কি না এটাও তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। এ দেশে প্রতিটি মানুষের ধর্ম অবলম্বন, পালন, প্রচার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে (বাংলাদেশ সংবিধান, ৩য় ভাগ, ৪১(১), (ক খ), পৃ. ১২)। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি পঞ্চদশ অধ্যায়ের ২৯৫ ও ২৯৫/এ ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা, লেখা ও আচরণের মাধ্যমে ধর্ম ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করলে বা আহত করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে। আমরা মনে করি ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ প্রণীত এ দণ্ডবিধি ধর্ম অবমাননাকারীদের শাস্তি প্রদানের জন্য যথেষ্ট নয়। বাস্তবতার নিরিখে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাসের মতো কঠোর বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রণীত ‘মানহানি বিধি’ (উবভধসধঃরড়হ অপঃ ২০০৯), পাকিস্তানে প্রচলিত ‘ধর্মাবমাননা আইন’ (ইষধংঢ়যবসু খধ)ি-ও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। কেবল আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয়ে আবেদন জানাতে চায়, ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম, মহানবী সা: ও সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ ও উপহাসকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে নতুন আইন তৈরি করা হোক। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বস্তি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সম্প্র্রীতির ফল্গুধারা বয়ে চলুক.