কারা হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার দ্রুত, স্বচ্ছ এবং তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ঢাকায় নিযুক্ত ১৩ রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং বাক্স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। পাশাপাশি, কারাবন্দী কার্টুনিস্ট কিশোরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবির পাশাপাশি তাকে কারা হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগরেও তদন্ত চেয়েছে তারা। শুক্রবার নিউইয়র্ক থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানিয়েছে সিপিজে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ঢাকায় নিযুক্ত ১৩ রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার বৃহস্পতিবার রাতে এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, মুশতাক আহমেদ ৫ মে ২০২০ থেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিচারাধীন মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন। আমরা মনে করি বিভিন্ন সময়ে তার জামিন আবেদন নাকচ করা হয়েছে, যার ফলে কারাবন্দী অবস্থায় তার উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দ্রুত, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্তের মধ্য দিয়ে পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে। তারা বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর প্রবিধান এবং এর প্রয়োগ নিয়ে আমাদের স্ব স্ব রাষ্ট্রের বৃহত্তর উদ্বেগের প্রেক্ষিতে আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। একই সঙ্গে এই আইনের গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও এর স্ট্যান্ডার্ড মানার থেকে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সামঞ্জস্যতার প্রশ্নেও আমরা আমাদের উদ্বেগ অব্যাহত রাখছি। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক, কানাডীয় হাইকমিশনার বেনওয়ে প্রিফন্টেইনার, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি স্ট্রাপ পিটারসন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জিন ম্যারিন স্কো, জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেন হল্টজ, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েজি, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ইস্পেন রিকটার ভেনডেনসেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রানসিসকো ডি আসিস ভেনিতেজ সালাস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। কাশিমপুর কারাগারে আটক মুশতাককে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের মে থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সিপিজেকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বা মুশতাকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত্যুর খবর জানায়নি। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি জানতে পারেন। সিপিজে’র এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র গবেষক আলিয়া ইফতিখার বলেন, ‘কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে মুশতাকের মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বারবার ও অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সিপিজেকে জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মুশতাক যখন আদালতে হাজির হন তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিপিজে জানায়, শুনানির দিন কিশোর তার ভাইয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে তিনি গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। চিকিৎসা ঠিকমতো না হওয়ায় তার পায়ে গুরুতর আঘাত হয়েছে এবং কানে ক্ষত তৈরি হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে মুশতাক ও কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়। সিপিজের গবেষণা অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। সিপিজে বারবার বাংলাদেশ কারা সদর দপ্তর এবং কারা মহাপরিদর্শক মো. মোমিনুর রহমান মামুনকে মন্তব্যের জন্য ফোন করলেও, কেউ ফোন ধরেননি। সিপিজে কারা সদর দপ্তরকে ইমেইলও করেছে। তবে, তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।