কিছুদিন আগে আমরা এক কাফেলা উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট সফর করি৷ কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ ও সেখানকার মানুষের দীনী হালত জানা ও কিছু ফিকির নিয়ে আসাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য৷ আলহামদুলিল্লাহ! কম সময়ে ফলপ্রসূ একটা সফর হয়েছে৷ সেই আলোকে সেখানকার মুসলমানদের কিছু অবস্থা ও চিত্র কারগুজারি আকারে পেশ করছি৷ আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়বেন- এক- পুরো লালমনিরহাট জেলায় মাত্র ৬/৭ টি মাধ্যমিক স্তরের কওমি মাদরাসা রয়েছে৷ যতটুকু জেনেছি একটাও দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত মাদরাসা নেই৷ এর বিপরীতে খ্রিষ্টানদের শতাধিক চার্চ রয়েছে৷ তাদের পরিচালিত স্কুলের হিসাব না-ই নিলাম৷ তারা কোথায় আর আমরা কোথায়, এখানেই অনুমান করা যায়৷ দুই- ‘হুজুর! আপনাদের এই টুকটাক ও ছিটেফোঁটা কাজ দিয়ে কিছু হবে না৷ আমরা যে তীব্র গতিতে কাজ করে যাচ্ছি, ২০ বছর পর বাংলাদেশে মুসলমান খুঁজে পাবেন না৷’ -জনৈক খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক কথাটি শুনে শিউরে উঠলাম৷ এ তো সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ এই উম্মাহর বিরুদ্ধে৷ তিন- খ্রিষ্টানরা তাদের বাতিল ধর্মের জন্যে নিজেদের সবকিছু উৎসর্গ করে দিতে পারে৷ এমনকি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে পর্যন্ত নতুন ধর্মান্তরিতদের মনোরঞ্জনের জন্যে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না৷ -ফিরে আসা এক মুরতাদ ব্যক্তির নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ৷ এটাই বাস্তবতা যে, তারা প্রয়োজনে অস্ত্র হিসেবে নারীদেরও ব্যবহার করছে৷ যারা ক্রুসেডীয় ইতিহাস পড়েছেন, তাদের অবশ্যই জানা আছে যে, এটা নতুন কিছু নয়৷ চার- আমরা আমাদের নিজের পরম মূল্যবান দীনের প্রচার ও মুসলমানদের ঈমান রক্ষায় সামান্য সময়, অর্থ আর শ্রম উৎসর্গ করতে পারি না৷ এরপরও আমরা পরকালীন জবাবদিহিতার ব্যাপারে নিশ্চিন্তে থাকি৷ পাঁচ- একজন লেবাসধারী মানুষ একটি মসজিদে ১২ বছর যাবত ইমামতি করেছে৷ পরে ধরা পড়ল, সে খ্রিষ্টান৷ একটি মাদরাসার মুহতামিম ও মুহাদ্দিস খ্রিষ্টানদের আমন্ত্রণে বিদেশ পর্যন্ত সফর করেছে৷ সে-ও খ্রিষ্টান৷ সেই এলাকার এক পরিচিত ‘পীর’৷ ধরা পড়ল সেও খ্রিষ্টান৷ ছয়- ইমাম মাহদি, ঈসা নবী এমন নামধারী ভণ্ড লোকদের উৎপাতও কম নয়৷ যারা নিজেদের মাহদি, ঈসা দাবি করে সরলমনা মানুষদের ঈমান হরণ করছে৷ সাত- দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভালো মানের বক্তারা সেসব এলাকায় প্রোগ্রামও দেন না৷ কোনো পীর সাহেবও সেসব এলাকায় যান না৷ এত উদাসীনতা, উপেক্ষা আর খামখেয়ালিপনার পরও আমরা কীভাবে আশা করি যে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের থাকবে? আট- এখন তো তারা বড়দের মাঝে খ্রিষ্টবাদ প্রচারে বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করছে৷ কিন্তু শিক্ষা ও সেবা খাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পেছনে তারা এমনভাবে কাজ করছে যে, ভবিষ্যতে আর এদের পেছনে তাদের ধর্ম প্রচার করা লাগবে না৷ শিশুরা ছোট থেকেই খ্রিষ্টান হয়ে গড়ে উঠছে৷ নয়- এখন আমাদের করণীয় হলো, ওইসব এলাকায় বেশি বেশি করে ইসলামিক স্কুল, নূরানী মক্তব ও মাদরাসা কায়েম করা৷ শিশুদের জন্যে দীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা৷ বড়দেরও দীনী শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা৷ বেশি বেশি করে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা৷ প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য রিজাল তৈরি করা৷ দাওয়াতি কার্যক্রম বেগবান করা৷ দশ- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বড় বড় মাদরাসার শিক্ষকমণ্ডলী থেকে বাছাইকৃত কিছু শিক্ষকের মাধ্যমে দাওয়াতি টিম গঠন করে মিশনারী অধ্যুষিত এলাকায় পাঠানো জরুরি৷ অন্যথায় উম্মতের ঈমানী তাকাযা পূরণের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হবে দুনিয়া এবং আখেরাতে৷ এগারো- দাওয়াতের নবীওয়ালা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে৷ দিনের বেলা দরদের সাথে দাওয়াতের কাজ৷ রাতের বেলা উম্মতের চিরস্থায়ী কল্যাণ ও নাজাতের জন্যে চোখের পানি ফেলে দুআ করতে হবে৷ আল্লাহ তাআলা উম্মতের ঈমানের হেফাজত করুন৷ আমাদেরকে কবুল করুন৷ (লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে)