আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনো কুরআন-সুন্নাহর বাইরে যাবেন না। এটা তার ওয়াদা। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে প্রতিদিনের কাজ শুরু করেন। কুরআন তেলাওয়াত করেন। ইসলামের পক্ষে কাজ করেন। বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত মজলিসে দাওয়াতুল হকের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। স্বীকৃতির পেছনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একদিন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি স্বীকৃতি দিচ্ছেন না কেনো? তিনি বললেন, আমিতো দিতেই চাচ্ছি। তারা সবকিছু গুছিয়ে আসে না কেনো? তখন আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি প্রতিদিন আপনাকে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিবো। এরপর কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কওমি আলেমরা যেভাবে চান সেভাবেই আমি তাদের স্বীকৃতি দিবো। মন্ত্রী বলেন, আল্লামা মাহমুদুল হাসান আমাদের এক গর্বের ধন। তিনি বর্তমানে বেফাকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক। আমি যখনই কোথাও আঁটকে যাই তখন ফোনে কিংবা সরাসরি তার থেকে পরামর্শ নেই। এর একটা ভালো দিকও আছে। আমি যেখানেই যাই। নামাজের সময় হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যাই। এটা অনেক আগে থেকেই আামার অভ্যাস। বর্তমানে হয়তো কাজের চাপের কারণে সব সময় এটা হয়ে ওঠে না। তবে আমি যেখানেই নামাজ পড়ি, শুনি মসজিদের ইমাম সাহেব আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেবরে ছাত্র। তাকে চিনেন। তার সাথে তার (ইমাম সাহেবের) সম্পর্ক আছে। ইত্যাদি। এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। মন্ত্রী বলেন, আামরা কুরআনের কথা শুনতে চাই। ইসলামের কথা শুনতে চাই। আমাদের কোনখানে ভুল রয়েছে সেটা শুধরে নিতে চাই। এজন্য আলেমদের সাথে আমার সু-সম্পর্ক। তিনি বলেন, আমি আলোচনার শুরুতেই মরহুম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আল্লামা আশরাফ আলী রহ. এর প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই। তিনি সব সময় সত্য কথা বলতেন। তার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। তবে তিনি মাঝে মাঝে রাগ হয়ে যেতেন। যা তার সততার কারণেই হতো। আল্লামা আনোয়ার শাহ রহ. এর প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই। তিনি বলেন, আজ আমাদের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী নতুন এসেছেন। তিনি নতুন কি শিখেছেন সেটা বললেন। সালাম প্রদানের সাথে সাথে বুকে হাত না দেয়া। আল্লামা মাহমুদুল হাসান সব বলেছেন, ইহুদীরা কি করে? খ্রিষ্টানরা কি করে? কিভাবে তারা তাদের ধর্ম পালন করে? তাই আমিও এখান থেকে এ বিষয়টি শিখতে পেরেছি। আমারও মাঝে মাঝে হাত উঠে যেতো সালামের সময়। আমি এখান থেকে শিখতে পারলাম, সালামের সময় হাত তোলা যাবে না। আবার সালামের পরে হাত বুকে লাগানো যাবে না। এটার নামই দাওয়াতুল হক। যারা সব সময় সুন্নাতের কাজ করেন। জুমআর নামাজের খুতবা সরকার ঠিক করে দেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি একদিন গুলশানের আজাদ মসজিদে গেলাম। সেখানে আলোচনা উঠলো জুমআর খুতবার বিষয়ে। সরকার নির্ধারণ করে দিবে কি দিবে না? তখন আমি বলে দিলাম, কুরআন সুন্নাহর বাইরে আমরা কখনোই কোনো কাজ করবো না। সুতরাং সরকারের উন্নয়ন বা ত্রুটির বিষয়ে কিছু বললে জুমআর পূর্বের বয়ানে ইমাম সাহেবরা বলবেন। কিন্তু সরকার কোনো কিছু নির্ধারণ করে দিবে না। তবে আমাদের মাঝে মাঝে যে ভুল হয় না। তা নয়। যদি কোনো ভুল হয় তাহলে সেটা শুধরানোর জন্য আপনারা রয়েছেন। আলেম উলামারা রয়েছেন। তারা আমাদের শুধরে দিবেন। আমরা সে অনুযায়ী পথ চলবো। এর আগে দাওয়াতুল হকের ইসলাহী ইজতেমায় বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল বলেছেন, আমি আজকে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের এ মজলিসে এসে অনেক শান্তি পেয়েছি। সেটা হলো, আমি ঢুকেই সালাম দিলাম। সালামের সময় হাত কপালের উপর তুলেছিলাম। তখন হুজুর (আল্লামা মাহমুদুল হাসান) বললেন, এখানে হাত তুলতে হবে না। আর সালামের পরে বুকে হাত দিতে হবে না। আমি অনেক সময় বুকে হাত দিয়ে ফেলি। এখানে এসে এ শিক্ষাটি পেয়ে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমি ছোটোবেলা থেকেই নামাজ আদায় করি। এখনো নামাজ কাজা করি না। আমি তাবলিগেও সময় লাগিয়েছি। আমি আপনাদের একজন সাথী। মাদানীনগর মাদারাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ইদ্রিস আলী সন্দ্বীপী রহ. কে স্মরণ করে তিনি বলেন, মাদানীনগর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ইদ্রিস আলী রহ. এর সাথে আমার পরিবারের অনেক সু-সম্পর্ক ছিলো। আমার বাবা, শুশুর সবাই তার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকা ইসলামপুর উপজেলার জামালপুর জেলায় ২০ টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেগুলোর সবগুলোর বর্তমান সভাপতি আমি। মাদানীনগর মাদরাসার বর্তমান দায়িত্বশীল মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেবের সাথেও আমার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মন্ত্রী বলেন, একজন মানুষের ইমান, আমল ও আখলাক। এ তিনটি বিষয় ঠিক হয়ে গেলে সারা দুনিয়া ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমরা যেনো ইসলাম মোতাবেক, কুরআন মোতাবেক ও সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে পারি সেজন্য রাব্বুল আলামীন আমাদের তৌফিক দান করেন। নিজ এলাকার জানাজার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এলাকার কারো জানাজা হলে আমি বলি, আজ তার জানাজা হচ্ছে, হতে পারে কাল আমার আপনার জানাজা হবে। তাই সামনের এ খাটিয়ার কথা স্মরণ করে নিজের জীবনকে শুধরে নেই। সবশেষে তিনি বলেন, আমি আলেম না। তবে ছোটোবেলা থেকে এ কাজের সাথে যুক্ত। আমি আজ এসেছি। আবারো আসবো। ইনশাআল্লাহ। যাত্রাবাড়ীর দাওয়াতুল হকের এ ইসলাহী ইজতেমায় কথা বলেছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, আমি বয়ান করার জন্য আসিনি। হুজুরের দোয়া নিতে এসেছি। আমাকে দাওয়াত দিতে হয় না। আমার যখন পিপাসা লাগে আমি হুজুরের কাছে আসি। হজরত আল্লামা মাহমুদুল হাসান আমাদের চরমোনাই গিয়েছিলেন, মাওলানা মাহফুজুল হকও গিয়েছিলেন, আমি থাকতে পারিনি। তাই কাজা কাফফারা দেয়ার জন্য আসছি। আজ আমাদের ঐক্য জরুরি। তবে সমস্ত মসজিদ মাদরাসা ভেঙ্গে এক করে দেয়া সম্ভব নয়। তাই সব ভিন্ন থাকলেও আমাদের মন থাকবে এক। আমাদের আদর্শ থাকবে এক। আমাদের উদ্দেশ্য এক। আমরা একই মজলিসে থেকে উদ্দেশ্য ভিন্ন থাকলে আমরা এক নয়; বরং ভিন্ন। আর আমরা চাই যেখানেই থাকি, যদি আমাদের উদ্দেশ্য এক থাকে, তাহলে আমরা এক। আমাদের ঐক্য এক। আমাদের আদর্শ এক। হজরত লুত আ. ও তার স্ত্রী একই বিছানায় ছিলেন, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিলো। তেমনই আমাদের উদ্দেশ্য এক থাকলে আমরা সব জায়গায় এক। আমরা মসজিদে যেমন এক থাকি, ঠিক বাইরেও আমরা এক থাকবো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এক ও নেক বানান। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মোহাম্মদপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হকও বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, দাওয়াতুল হকের কাজ হলো পৃথিবীতে আল্লাহর রাসুল সা. এর সুন্নাহকে জিন্দা করা। আল্লাহ তায়ালা এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে এ কাজ শুরু করিয়েছেন, তিনি হলেন আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ.। আর বাংলাদেশে এ কাজ করেছেন আল্লামা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ.। আমরা এ কাজ করতে গিয়ে যখন চিন্তা করবো এর নেসবত কত উপরে তখন আমাদের বুঝে আসবে এটা কত মহান কাজ। আজ বাংলাদেশে এ মহান কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন মুহিউস্সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান। আমরা রাসুলের সুন্নাহকে জীবিত রাখতে এ কাজের সঙ্গে অবশ্যই জড়িত থাকবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। যাত্রাবাড়ীর দাওয়াতুল হকের ২৬তম দিনব্যাপী ইসলাহী ইজতেমায় উপস্থিত ছিলেন, আমীরে দাওয়াতুল হক মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধূরী, আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী প্রমূখ দেশখ্যাত উলামায়ে কেরাম।