গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, দেশে এখন কথা বলার নিরাপত্তা নেই, জানমালেরও নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ এই বয়সে আমার জেলে যাওয়ার শখ নেই। সারাজীবন অন্তত একটা জায়গায় আয়েশী জীবন আছে আমার। এরমধ্যে আমার দুটি কিডনিই নষ্ট। শারীরিক আরও জটিলতা আছে। এ অবস্থায় জেলে গেলে বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই থাকবে না। এরপরও প্রত্যেকের জাতিগত কিছু কর্তব্য আছে। আমি সেখান থেকে কথা বলতে চাই। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাম্প্রতিক কাশ্মীর পরিস্থিতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশকে মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমার নেই। এটা নিয়ে কথা বলবে সরকার। এ কাজ সরকারের। কিন্তু জাতীয় সংসদে এটা নিয়ে কোনো কথা বলা হয় না। আওয়ামী লীগ কথা বলতে রাজি নয়। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা এ ধরনের পরিবেশ চাই না। আমরা আগামী একশ’ বছরের ইতিহাসও ভালোভাবে দেখতে চাই। তাই তাবেদারি না করে, আল জাজিরার বিরুদ্ধে কথা না বলে সত্যকে বের করুন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মাধ্যমে ইসরায়েলের সহায়তার প্রস্তাব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ইসরায়েল সাহায্য করতে চেয়েছিল। আমি এর সাক্ষী। ওই রাষ্ট্র বিনা পয়সায় আমাদের অস্ত্র দিতে চেয়েছিল। স্বাধীন হওয়ার পর সেই পয়সা দেওয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমেদ ও জেনারেল (অব.) এমএজি ওসমানী তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। কারণ তাজউদ্দিন আহমেদ তখন বুঝতে পেরেছেন, ইসরায়েলের অস্ত্রের মাধ্যমে আমরা হয়তো দ্রুত স্বাধীনতা পাব, কিন্তু জনগণ তাদের স্বাধীনতার স্বাদ সেভাবে পাবে না, আরব বিশ্ব থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। জাফরুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালে ইসরায়েল প্রত্যাখ্যাত হলেও তারা বসে নেই। এখন তাদের দেওয়া যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের কথাবার্তা সব ফাঁস হয়ে যাবে। যেখানে যা বলি না কেন, যা কিছু করি, তার সবকিছু ওই যন্ত্রে ধরা পড়বে। আর আমাদের ধরে নিয়ে যাবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ভারত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধ শক্তি তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে। ইসরায়েল ও ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারি করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না। ভারত বাংলাদেশকে সিকিম বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেটা চাননি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে যাননি। স্বাধীন হওয়ার পরও এমনকি ভারত প্রস্তাব দেওয়ার পরও তিনি ভারতের বিমানে না এসে ব্রিটিশ বিমানে আসেন। তিনি ভারতে নামতেও চাননি। তবে পরে নেমেছিলেন। কারণ শেখ মুজিব বুঝেছিলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তখনই ইন্ধিরা গান্ধী বুঝেছিলেন, শেখ মুজিবকে আয়ত্বে আনা সহজ হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতেন, আপনিও পিতার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিন। মোসাহেদদের আপনার পাশ থেকে সরিয়ে দিন। দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন। তখন যদি আপনার প্রতি কোনো অন্যায় করা হয় তাহলে কেউ না থাকলেও আমি আপনার পাশে আছি। আমি একা রাস্তায় থাকব। এখন যেমন খালেদা জিয়ার ওপর অন্যায় করা হচ্ছে বলে আমি প্রতিবাদ করছি, তখন আপনার ক্ষেত্রে করব। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে ও সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ বাংলাদেশ সম্পাদক কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ার সঞ্চালনায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন, সামরিক বিশেষজ্ঞ কর্নেল (অব.) আশরাফ আল দ্বীন, কাউন্টার টেররিজম বিশেষজ্ঞ ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক এএফএম করিম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল বাশার খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাপরিচালক সাকিব আলী।